বছরের উষ্ণতম সময়গুলোর মধ্যে গ্রীষ্মকাল অন্যতম একটি ঋতু। এসময় গাছপালা সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপ এবং সীমিত বৃষ্টিপাতের কারণে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। তাই গ্রীষ্মকালসহ বছরের উষ্ণতম সময় জুড়ে বাগানকে প্রাণবন্ত রাখার জন্য প্রয়োজন বাড়তি পরিচর্যা। অতি সাধারণ কিছু নির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমে মাটিতে পানি সংরক্ষণ করে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। আসুন তাহলে সহজ কিছু নির্দেশনা জেনে নেই যেগুলো বাগনবিলাসের অভিজ্ঞতাকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ করে তুলবে।
মাটি সম্পর্কে জানুনঃ
গাছে কার্যকরী উপায়ে পানি প্রয়োগের প্রথম ধাপ হচ্ছে মাটির ধরন বোঝা। বালুময় মাটিতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয় এবং ঘন ঘন পানির প্রয়োজন হয়, যেখানে কাদামাটি বেশি সময় আর্দ্রতা ধরে রাখে যার ফলে পানির প্রয়োজন হয় তুলনামূলকভাবে কম। এই দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় দোআঁশ মাটি বেশ ভালো সমাধান হতে পারে। দোআঁশ মাটি, গোবর ও জৈব সারের মিশ্রণে তৈরি স্পেশাল রেডিমিক্স মাটি তাই বাগান করার জন্য অন্যতম কার্যকরী উপাদান।
পানি কি দ্রুত নাকি স্লোঃ
পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পানি থেকে গাছপালা যেন সর্বাধিক সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে নিয়ম করে সকাল-সন্ধ্যায় গাছে পানি দিতে হবে। সকালে সূর্যের তাপে মাটি তেতে যাওয়ার আগেই গাছে পানি দিতে হবে। দিনের উত্তাপের সময় পানি দেওয়া গাছপালার জন্য বেশ ক্ষতিকর। সন্ধ্যায় বা বিকেলে পানি দেয়ার আগে অবশ্যই হাত দিয়ে মাটির উত্তাপ পরীক্ষা করে নিতে হবে কারণ উত্তপ্ত মাটিতে পানি প্রয়োগ করলে গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গাছ মারা যেতে পারে। সন্ধ্যায় বা বিকেলে পানি না দিয়ে রাতেও গাছে পানি দেয়া যেতে পারে। চারাগাছে পানি প্রয়োগে আরেকটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ চারাগাছে অতিরিক্ত পানি প্রয়োগে খুব সহজেই গাছের গোড়া পঁচে যেতে পারে। চারাগাছের মাটি যদি আদ্র হয় তাহলে স্প্রেয়ার দিয়ে গাছের উপরে স্প্রে করা যেতে পারে। মোদ্দাকথা হচ্ছে মাটির আদ্রতা পরীক্ষা করেই বুঝতে হবে গাছের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা আসলে কতটুকু।
ডিপ ওয়াটারিং বনাম সারফেস ওয়াটারিংঃ
ঘন ঘন গাছে পানি দেওয়া অগভীর শিকড়ের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে, গাছপালাকে খরার চাপের জন্য সংবেদনশীল করে তোলে। তাই মূল অঞ্চলে পৌঁছে গাছের গভীর পানি দেওয়ার প্রতি জোর দিতে হবে। ধীরে ধীরে এবং সরাসরি গাছের গোড়ায় পানি সরবরাহ করতে ড্রিপ সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে গাছের গভীর শিকড় বৃদ্ধি পায় এবং খরা প্রতিরোধও প্রতিহত হয়।
বাগান মালচঃ
মালচ একটি প্রতিরক্ষামূলক বাধা হিসাবে কাজ করে, মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং আগাছার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। গাছের চারপাশে কাঠের চিপ বা খড়ের মতো জৈব মাল্চের একটি স্তর তৈরি করতে পারলে এটি কেবল পানিই সংরক্ষণ করে না বরং মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে।
রেইন ব্যারেলে বিনিয়োগঃ
ব্যারেলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক শক্তিকে কাজে লাগানো গেলে এটি বাগানীদের জন্য বেশ ভালো বিনিয়োগ হতে পারে। কারণ বৃষ্টির পানি রাসায়নিক মুক্ত এবং বাগানে পানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য আদর্শ৷ ডাউনস্পাউটের নিচে বৃষ্টির ব্যারেল ইনস্টল করে শুকনো মৌসুমে বাগানের হাইড্রেশনের চাহিদা অনায়াশে পূরণ করা সম্ভব ।
শেষকথাঃ
সঠিক পানি দেওয়ার কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারলে গ্রীষ্মকালে গার্ডেনিং অভিজ্ঞতা বেশ আনন্দময় ও উপভোগ্য হয়। আপনার বাগানের মাটিকে বোঝার মাধ্যমে, আপনার পানি দেওয়ার সময় নির্ধারণ করে এবং এই গ্রীষ্মকালীন পানি দেওয়ার নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করে, আপনি কেবল পানি সংরক্ষণ করবেন না বরং বছরের উষ্ণতম মাসগুলিতে একটি সমৃদ্ধ, সুন্দর বাগানও বজায় রাখবেন।